শনিবার, ১৮ জানুয়ারী ২০২৫, ০৪:৪৮ পূর্বাহ্ন
ভয়েস অব বরিশাল ডেস্ক॥ যমুনার নদীর পানি সিরাজগঞ্জ পয়েন্টে দ্রুতগতিতে বাড়ছে। আর পানি বাড়ার সাথে সাথে বসতভিটাসহ ফসলি জমি তলিয়ে যাচ্ছে। এতে দুর্ভোগে পড়ছে হাজার হাজার মানুষ। স্বপ্নের ফসল পাট, বাদাম, সজ, কাউন, তিল ও শাকসবজি নষ্ট হয়ে পড়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়ছে কৃষক। আগামী দিনগুলো পরিবার-পরিজন নিয়ে কিভাবে দিন কাটবে এ দুশ্চিন্তায় রয়েছে কৃষকরা।
অন্যদিকে, পানি বাড়ার সাথে সাথে যমুনার অরক্ষিত তীরে ভাঙ্গন শুরু হয়েছে। প্রতিদিন বিলীন হচ্ছে বাপ-দাদার পৈত্রিক ভিটাসহ ফসলি জমি। সবকিছু হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়ছে ভাঙ্গন কবলিতরা। অনেকে খোলা আকাশের নীচে মানবেতর জীবনযাপন করছে। এ অবস্থায় একদিকে যেমন বন্যার সংকট কাটাতে সরকারের কাছে বিশেষ বরাদ্দ অন্যদিকে ভাঙ্গন রোধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা।
জানা যায়, উজান থেকে পাহাড়ি ঢল ও ভারী বর্ষণের ফলে যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধি পেতে শুরু করেছে। বর্তমানে যমুনার পানি সিরাজগঞ্জ পয়েন্টে বিপদসীমার ১২ সে.মিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে সিরাজগঞ্জ সদর, কাজিপুর, বেলকুচি, চৌহালী ও শাহজাদপুরের চরা লের প্রায় ৩০টি ইউনিয়ন তলিয়ে গেছে। হাজার হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। এসব অঞ্চলের কৃষকের ফসল পানিতে তলিয়ে নষ্ট হয়ে গেছে।
একদিকে করোনায় কর্মহীন অন্যদিকে বন্যা দুই মহাদুর্যোগে পানিবন্দী মানুষগুলো দুর্বিষহ অবস্থায় পড়ে গেছে। এছাড়াও শহরের বাঁধের পূর্বপাশের খোকসাবাড়ী ইউনিয়ন ও কাটাওয়াপদাসহ বেশ কয়েকটি গ্রামের বসতভিটা তলিয়ে গেছে। এসব মানুষ ওয়াপদা বাঁধের উপর টিনের চালা তুলে আশ্রয় নিয়েছে। কর্মহীন এসব মানুষের কাছে এখনো কোন সহায়তা পৌঁছেনি। এছাড়াও পানি বাড়ায় চৌহালী উপজেলার বিস্তীর্ণ অঞ্চল ও এনায়েপুতপুরের আড়কান্দি থেকে পাঁচিল পর্যন্ত ব্যাপক ভাঙ্গন শুরু হয়েছে। অব্যাহত ভাঙ্গনে বিলীন হচ্ছে বসতভিটাসহ ফসলি জমি। ভাঙ্গনকবলিত মানুষে খোলা আকাশের নীচে মানবেতর জীবনযাপন করছে। এছাড়াও প্রবল স্রোতের কারণে নদী তীর সংরক্ষণ বাঁধগুলো ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। এদিকে, যমুনার পাশাপাশি আভ্যন্তরীণ ফুলজোড় ও করতোয়া নদীর পানিও ফুলে ফেটে উঠায় শাহজাদপুর, উল্লাপাড়া ও তাড়াশের বিস্তীর্ণ নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে পড়েছে।
কৃষক আলহাজ মিয়া ও তাহেল মণ্ডল জানান, বন্যা শুরু হয়ে গেছে। পানিতে আমাদের চরাঞ্চলের তিল, শাকসবজি, পাট ও কাউনসহ ফসল তলিয়ে একেবারে নষ্ট হয়ে গেছে। করোনা দুর্যোগের মধ্যে ফসল নষ্ট হওয়ায় আমরা চোখে-মুখে অন্ধকার দেখছি।
কাওয়াকোলা ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান শাহাদত হোসেন ঠান্ডু জানান, জুন মাসের শুরু থেকে যমুনার পানি বৃদ্ধি শুরু হয়েছে। পানি বাড়ায় চরাঞ্চলের সব ধরনের ফসল তলিয়ে একেবারে নষ্ট হয়ে গেছে। মানুষজন পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছে। তিনি জানান, প্রতিবছর বন্যায় চরাঞ্চলের মানুষ চরম দুর্ভোগে পড়তে হয়। এজন্য সরকার যদি বন্যাকালীন সময়ে চরা লের জন্য বিশেষ বরাদ্দ দেয়, তবে চরাঞ্চলের মানুষের অনেকটা সংকট কেটে যাবে।
সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী শফিকুল ইসলাম জানান, আগামী ৭২ ঘণ্টা যমুনার পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকবে। বড় ধরনের না হলেও মাঝারি ধরনের বন্যার কবলে পড়বে সিরাজগঞ্জ। পানি উন্নয়ন বোর্ড সার্বক্ষণিক তীর সংরক্ষণ বাঁধগুলো নজরদারিতে রাখছে। কোথাও কোন সমস্যা হলে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়া হবে।
সিরাজগঞ্জ জেলা প্রশাসক ড.ফারুক আহমেদ জানান, সবেমাত্র পানি বাড়তে শুরু করেছে। বন্যা হলে তা মোকাবেলা করতে আমাদের সবধরনের প্রস্তুতি আমাদের রয়েছে।
Leave a Reply